লাপারবাহা তত্ত্ব
বিকেল হতে-থাকার দিকে দুপুরের রোদ।
কালিপাহাড়ি আড়মোড়া ভেঙে রাতের জন্য তৈরি হয় এই সময়টায়।
মরা উনুনে সরু ধোঁয়া পাকিয়ে পাকিয়ে আশমান টাচ করে।
মদ যথাবিহিত মুরগির দোকানে এই সময়টাই ভিড়ের।
এতসব ঘটমান বর্তমানে ভারী বুটের শব্দ তুলে লালমুখে বড়বাবু, লুলার দরজায় খাড়া, লুলার বেটা তখন ট্রলিব্যাগের চাকা ঘোরাচ্ছে ট্রুরর ট্রুরর।
—কাণ্ডটি তোর শালা! বড়বাবু ব্যাগটি হাতে নেন।
—ভাবলম ত লাহরমোহর পাব সার, গুচ্ছের ঝলঝলে সিনথেটিক শাড়ি ছিল।
ব্যাগটার চেন খুলতে খুলতে, ‘শালা বেঙ্গলের পেস্টিজ পাংচার করে দিলি’ বড়বাবু বললেন ব্যাগের অভ্যন্তর দেখে, সত্যি করে বল নগদ রকড়া কত ছিল?
বড়বাবুর পুলিশি চোখ ছুঁচোলো।
—বাল ছিল! ফুটা টিকলিও ছিল নাই, মাইরি!
—শালারা এফআইআরে লেখাইছে নগদ বিশ হাজার ছিল।
—ওই জন্যে ক্যালা ছোটলোকের মাল ছুঁতে নাই।
—সেটা কি আমি বুঝছি নাই রে খেপা! বড়বাবু লুলার পিঠে হাত বোলান।
মালকড়ি রইলে এতক্ষণ তুই সিধা থাকতিস!
—তাহালে ব্যাগটা দিয়ে যাও।
নুনুটা চাক ঘুরাই খেলুক।
বড়বাবু বড়ো আদরে লুলাকে বললেন, ছাড় উসব।
পাতি কেস, পার্টির চাপে আসা।
পাটির চাপেই চলে যাচ্ছি।
লুলার ছেলেকে ব্যাগটা দিলেন, লে নুনু, স্টেটটাকে ঘুরা দেখি, আর বাঁড়া সহ্য হয় না! কাজের কথায় আয়, জিটিরোডে না তুলিস, লোকাল মার্কেটে মাল ছাড়।
অক্সিজেন দে দেখি বাপ, একটু জান দে! বাঁচা!
একটু অতীতচারী হন বড়বাবু, কী সুন্দর সিস্টেম চলছিল! অতি লোভে, পাণ্ডেবাবুরাই ঘুচাল! কতবার বলেছি, মহারাজ, একটু রহমেসহমে কুলাইগুছাই খাও, মাটির তলার মাল মাটিতেই রইল।
সে শালা, তর সইছে নাই! বলল, কোনো শালা এক খি ছিঁড়তে লারবেক দিদির রাজত্বে।
কেমন হাজতে পঁচচ্ছিস এখন!
লুলাও দুঃখিত হয়, মাঝখানে আমাদের ভাত গেল সার! বহোতবার কসন দিইছি সার আমিও, মুখটায় মুতে দিল!
দুঃখিত হন বড়বাবু, আসলে কারোই কুনো দোষ নাই, দোষ টিএমসিরই।
কোনো চুনাওয়েই পাটি গ্যারান্টি দিতে লারছে জিতবই! হারতে হারতে জিতে যাচ্ছে।
এমন রিস্কি গম্মেন্টে সবারই তাড়াহুড়ো থাকে, সামনে পড়ে আছে মাত্র পাঁচটি বছর।
সিপিএম আমলে যে পারত সেই দু’-চার বরা কয়লা তুলে এক বোতল মদ আর একটা জ্যান্ত মুরগা নিয়ে ঘর ফিরত।
অত বেকার সমস্যা ছিল না।
অতবড় বনজঙ্গল মেলাময়দান মাঠ পড়ে আছে।
যা,
যেখেনে খুশি কয়লা তুলগা।
তখন সবাই সিপিএম।
টিএমসি আসার পর সবাই টিএমসি।
তবুও পাবলিকের কয়লা-পোটাকশন নিয়ে নিল সিন্ডিকেট।
যে দলের যা ডাস ক্যাপিট্যাল।
অ্যাদ্দিন সবাই ছিল নিজেই নিজের মালিক, নিজেই নিজের শ্রমিক।
শ্রম, অর্থনীতি, পুঁজি সব ছিল শ্রমিকদের স্বার্থে।
সবাই হয়ে গেল পিওর লেবার।
খাটো খাও ঘর যাও, মজুরি-শ্রম মজুরদের জন্য কোনো সম্পদ সৃষ্টি করে না।
যেমন যেমন ইসিএল কোলিয়ারি বন্ধ হয়েছে, তেমন তেমন সিন্ডিকেটের হাত লম্বা হয়েছে।
এসব দোষের কিছু নয়।
কেউ তো ভাবেনি নাই নাই করে তিন নম্বর টার্মে পা দেবে দিদি।
প্রতিবার বিধানসভা নির্বাচনে দিদির আর পরিত্রাণ নাই।
সব যুবকরা হতাশ।
দিদির মুখেও টেনশনজনিত বয়স্কের বলিরেখা।
খোঁড়া-পা নিয়েই সারা বঙ্গ হুইলচেয়ার! রেজাল্টে দিদিই ফার্স্ট।
দু’গুণ উদ্যমে ভাইরা ময়দানে, মৌকা মিলা হ্যায় ঔর পাঁচ সাল! থাকে? এমন নসিব-নির্ভর প্রশাসনে কোনো লুণ্ঠনেই লিমিট থাকে? থাকার কথা? না।
থিতুই কবে হতে পারল, যে
রহমেহসমে দেশ চালাবে দিদি?
লুলা বলল, সেন্ট্রাল ফোর্স যে লোকালেও টহল মারছে সার!
সেই ত! বড়বাবু টুপি খোলেন, কত কিস্তি ডিএ বাকি, রেশন সুদ্দা তুলে দিল, শুকনা ক’টা টাকায় ইজ্জত রক্ষা হয়।
অসম্ভব। বুঝলি?
চিন্তিত লুলা, আমাদের অবস্থার কনডিশনটা তাহালে ভাবো? পাতি ছিনতাই কেসেই ছুটে আসছেন!
—তাহালে রেপ-মাডার কর!
—বেঙ্গলে যে রেপ-মাডারের কালচার নাই সার, দিদি ত বলল।
কিংকর্তব্য লুলা বিমূঢ়।
বড়বাবু যিনি সতত গম্ভীর, ততোধিক গাম্ভীর্য হেতু গম্ভীর, বড়বাবু গলা ঝেড়েটেড়ে, বড় করুণ মুখের বড়বাবু বললেন, কোল-সেক্টর ছেড়ে ছিনতাই-সেক্টরে ঘুসে গেলি, বড় কষ্ট পাচ্ছি।
বড় প্যাথেটিক... বেঙ্গলের অধঃপতন কতটা এতেই ক্লিয়ার।
বুকটা চিনচিন করছে মাইরি তোদের অবিমৃশ্যকারিতায়...
একদা মাস্টারি করতেন বলে মাঝেমাঝেই পুলিশি-ভাষা মাস্টারি-ভাষায় কনভার্ট হয়ে যায় বড়বাবুর।
বড়লোক হবেন বলে টিচারি ছেড়ে এসআই-এর পরীক্ষা দিয়ে থানার মেজোবাবু।
পোস্ট বনগাঁ থানা।
যত রোজগার, তার চেয়ে বেশি গুলি চালিয়ে ধরাধরি ঘুষঘাষ করে-দিয়ে আসানসোল, স্টেটের সেকেন্ড মেগাসিটিতে।
ব্ল্যাক ডায়মন্ড সিটি।
বউকে ওয়াদা দিয়েছেন, ডায়মন্ড নেকলেস গিফট দেবো ম্যারেজ অ্যানিভার্সারিতে। নেট
সার্চ করে বউটা বলল, চন্দ্রাণী জুয়েলার্স, পিসি চন্দ্র, আরও কত।
কলকাতার সব বিখ্যাত জুয়েলার্সরা ব্রাঞ্চ খুলেছে আসানসোলে।
বড় মনখারাপের বড়বাবু লুলাকে বললেন, দেখ
শালা,
যা মন যায় তাই কর।
দুটো ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি বৃথা গেল, টু-পাইস কামা।
মাথা উঁচু করে কামা। কত শালা কোটি কোটি টাকা লুটে নিল! তোরা শালারা একটা হিরার নেকলেসের কিমত জুটাতে লারছিস! তোদের দ্বারা বাল হবেক!
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বড়বাবু পা তুললেন চলে যেতে।
একদা মাস্টারি করেছিলেন বলে জ্ঞানদানের মৌকাটা ছাড়লেন না।
—বড় কাজের জন্য জেল যাওয়াও ইজ্জতের।
ফাঁসি যাওয়া মানে অমর হয়ে গেলি।
তবে এমন কিছু করিস না, মালটা সিবিআইয়ে চলে যায়!
—সিট পজ্জন্ত ওকে…
—সিআইডিও ঠিক আছে…
লুলার বড় আপন লাগে বড়বাবুকে।
পিটপিট করে চোখ একবার খুলল, একবার নিভাল।
—ভুলেও কভ্ভি রেপটেপ কেসে ফাঁসিস না, রেপে ফায়দা নাই।
টাকাপয়সার সঙ্গে রিস্তা জিরো।
এসব কুপ্রবৃত্তির প্রকাশ।
রোজগার
কিছু নাই ধর্ষণে, নইলে বলতাম ধর্ষণই কর! লাভটাভ
মতন কর, দশটা মাগিকে চুঁদে ফুটাই দে, ঠিক আছে। দিদি
বীরের সম্মানে জেল থেকে ছুড়াই আনবেক।
বড়বাবু মাস্টারি-নস্টালজিক। ব্যাখ্যা করলেন, ধর্ষণ একটি নিম্নচাপ।
কিছু ডাল ভাঙাভাঙি হয়।
বাজ গরজায়।
বৃষ্টি হয়।
তারপর বাল! নীল আশমানে কেবল নীল বাড়ে।
ফটাফট আওয়াজ ওঠে চটির।
টাকাপয়সার সঙ্গে রিস্তা জিরো।
দুঃখিত ও চিন্তিত লুলা ততোধিক চিন্তিত বড়বাবুকে গাড়ি পর্যন্ত তুলে দিল টাটাবাইবাইয়ে, ঠিকোই বলেছ।
—একটু নজর দিস।
পুঁজিটাই ফেরত পাই নাই ভাই!
—দেখছি।
দুঃখিত লুলা দুঃখ-তাড়নায় উদমা টহল দিয়ে এলো ননিয়া নদীর এপাড়টা।
খাদানে খাদানে ঘাস ঝোপঝাড়।
কাঁটা মেশিনটায় জং।
খোপে খোপে ব্যাং চরছে।
ভগ্নমনোরথ শ্রীযুক্ত লালমোহন বাউরি ইস্টিশনে এসে একটি বিড়ি ধরায়।
তার চেলারা ততক্ষণে একটি একটি বিড়ি শেষ করে হাওয়া খাচ্ছে। লাইন ক্লিয়ার বিহনে আপ প্ল্যাটফর্মে দু’-দুটো মালগাড়ি, আপে ডাউনে দুটো
এক্সপ্রেস,
ঝাঁইঝাঁই পার হয়ে গেল।
অন্ধকারে ঝুলন্ত লাল টুক করে সবুজ হয়ে গেলে ঘট-ঘটাং মালগাড়ি ধীর লয়ে প্ল্যাটফর্ম পার হতেই শূন্য প্ল্যাটফর্মে লুলা ও লুলার তাহারা।
আশমানে তখন ঢুলুঢুলু কাটা-চাঁদ।
লুলা ও লুলার তাহারা স্টেশনে এসে বসে আর মোবাইল চালায় বিশেষ কোনো অপারেশন না থাকলে।
তবে অপারেশন তো অপারেশনের নিয়মেই ঘটমান। লুলা ও লুলার তাহাদের অপারেশনের জন্যই অপেক্ষা করতে হয়।
যার যেমন স্কিল, যার যেমন বিদ্যা, যার যতদূর দৃষ্টি-দূরদৃষ্টি সে-ও তাহারা শোচে।
বাতলায় আর কাল্পনিক হয় আর কী কী গুণ থাকলে ভাদু শেখের মতো একটি প্যালেস বানাতে পারে সে শিক্ষার পাঠক্রম নেয়।
আশাবাদী হয়, হতাশ হয়, আশায় সঞ্জীবিত হয়।
এরা কেউ বেশিক্ষণ সাইলেন থাকতে পারে না।
অল্প বিদ্যার এই দোষ।
স্থানিক প্রাদেশিক জাতীয় আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ যে-যেমন মোবাইলে শুনেছে, যে-যার বিদ্যাবুদ্ধি মতো জানায়, মোবাইল সকলকেই কমবেশি সুশিক্ষিত করে দিতে পেরেছে। লফরা বলল, ঊষাগ্রামের ট্রাফিকে, হাঁটু অবদি উঁচু বালি-বস্তা, রাস্তার দু’পাশে, একে ফোরটি সেভেন হাতে সেন্ট্রাল আর্মড-পুলিশ, মানে বুঝছিস, আসানসোল কত খতরায়? নিজের মনেই বলেছি, জয় শ্রীরাম, পুলিশটাও মাইরি, কি সুন্দর মুসকুরা, ঠোঁটের খৈনি ফেকে বলল, জয় শ্রীরাম।
—ইন্ডিয়ায় পুলিশ মিলিটারি অপসর মিনিস্টার সব শালাই রাম আর হারামে ডিভাইডেড।
গত বছর থেকে লার্জস্কেল খাদান বন্ধ।
বহু পরিশ্রমে যাহারা কোল-মাফিয়া বলিয়া সুপরিচিত হইয়াছিল তাহারা সম্প্রতি সিবিআই হেফাজতে।
উচ্চাকাঙ্ক্ষীরা দাঁড়পাল গুটিয়ে এখন ফক্সহোলে।
তা বলে লুলা ও লুলার তাহাদের হোলবন্দি হলে চলে কি? পৃথিবীতে দু’নম্বরি কখনও সংকুচিত কখনও প্রসারিত।
তাহা কখনোই লীন হইবার নয়।
লুলাদের জানার কথা নয়, মার্কিন দেশে জাতীয় বাজেটের বিশ শতাংশ আসে ক্রাইম থেকে।
পশ্চিমবঙ্গ আমেরিকান মডেল গ্রহণ করিয়াছে— জিটি রোডে সিভিক পুলিশের দ্বিচক্রযান, চতুঃচক্রযান নিয়ে টানাহেঁচড়ায় তাহা অনুভূত।
তবে কয়লা খাদানের বহোত লাফড়া।
বহোত ফেরিমাদারি। সেন্ট্রালে স্টেটে এক দলের সরকার হলে এসব লাফড়া থাকে না।
—নাঃ, বেঙ্গলে বিজেপি চাই।
লুলার বাপ বলত, যা ভালো, তা পিঁপড়ের ইস্পিডে চলে, কিন্তু খারাপের উইং আছে, ফড়ফড় ওড়ে।
লুলা ইস্পিড দিয়ে সময়টাকে বিচার করে।
আসানসোল ইস্পিডেই শহরে পরিণত হয়।
দ্রুত বিকশিত বলে তার বিনাশও দ্রুতগতির।
তাহার মাটির নীচে মাটি নাই, ফরা।
লুলা ও লুলার তাহাদের জানার কথা নয়।
মাত্র দুশো বছর বয়সী আসানসোল পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় শহর।
ভারতের সপ্তম।
তাকে কেউ গড়েনি।
তার বাড়বাড়ন্তে কারও কোনো হস্তক্ষেপ নাই।
জাগ্রত খ্রিস্টানদের সহায়তায় আসানসোল নিজের ঈশ্বরপ্রদত্ত উপাদানে নিজেই শহর হয়ে ওঠে।
শহর না হয়ে উপায় থাকে না তার— সম্প্রতি নিঃস্ব শূন্য।
শূন্যটাকে পূর্ণ বলে তুলে ধরতে, তাকে বৃহৎ ও বৃহত্তর প্রমাণ করতে, তার কর্পোরেশন-পরিধি রানিগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তারিত হল আগের কর্পোরেশন নির্বাচনে।
সে তো রাজনৈতিক।
প্রকৃত প্রস্তাবে তার যে মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে তাকেই মান্যতা দেওয়া।
তার গৌরব তার সঞ্চিত সম্পদ।
তাকে লুণ্ঠনের ভেতর দিয়েই তার উত্থান।
তার পতন।
লুলা ও লুলার তাহারা সকলেই বুঝতে পারে, তাদের হটে যেতে হবে। আসানসোল একটি পরিত্যক্ত শহর। কয়লা যত শেষ হবে, ততই তা কর্পোরেটের মুঠোয় চলে যাবে।
নব নব প্রযুক্তি তাদের সরিয়ে দিচ্ছে আবহমানকালের জীবিকা থেকে।
কিন্তু শহরটি সকলকেই তার পিঠ থেকে ঝেড়ে না ফেলা পর্যন্ত সকলেই থেকে যাবে।
একটি লোকসভা, চারটি বিধানসভা, একটি কর্পোরেশন নিয়ে।
সে শহর হয়েই বেঁচে থাকবে।
সাইক্লোন যখন আসে তার সুফলগুলিকেও বিবেচনায় নিতে হয়।
খরাপ্রবণ এলাকায় বৃষ্টিপাত ঘটায় সাইক্লোন।
এক জায়গার বীজ কাঁহা কাঁহা উড়িয়ে নিয়ে যায়।
কত অহংকারী বৃক্ষের পতন হয়।
কত নব নব সম্ভাবনা রচনা করে বিধ্বংসী ঝড়তুফান।
মমতা আসার পর কত লোক কত কি ভেবেছিল।
কিন্তু দিদি আমাদের একটি বিশুদ্ধ এক্সপেরিমেন্ট। একটি
স্থবির ও নির্ভীক পশ্চিমবঙ্গ।
এই পশ্চিমবঙ্গে বাল হয়! লুলাকে অ্যানড্রয়েড ভাবিয়েছে।
সব বিপ্লবী পার্টি যেমন গ্রুপে উপগ্রুপে বিভক্ত, এসইউসি যেমন টিএমসিকেই বিপ্লবী পার্টি মনে করে সিঙ্গুরে কাঁধে কাঁধ দেয়, মাওবাদীদের একটা গ্রুপ যেমন মমতাকে লুক্সেমবার্গ ধরে নিয়ে জানে লড়িয়ে দিয়েছিল, তদ্রূপ লুলার সংগঠনেও সংশয়, ছোট ছোট ভাঙন, মতাদর্শগত বিতর্ক এবং বিভাজন সত্ত্বেও তারা রিভোলিউশনারি ও পাওয়ার।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি যত দুর্বল হবে টিএমসির প্রতিপক্ষ হবে লেফট— লুলার
মত। সিপিএম পাওয়ারে এসেই কি লাহোরমোহর দিয়েছে।
বরং বিজেপিই আসুক।
লফরা অ্যান্ড তার গ্রুপের মতবাদ।
অপেক্ষা আর অপেক্ষা। একঘণ্টা পার হয়ে যাবার পরও লোকাল ট্রেনের মা-বাপ নাই।
কোনো অ্যানাউন্স নাই।
রিভোলেশনের কোনো সম্ভাবনা নাই।
ফুচ্যা গুজ্যার হাই ওঠে, নাঃ, চললম, গুড নাইট।
লুলা ইশারায় গুড নাইট জানায়।
লুলা তখন একটা হেব্বি মালে।
মোবাইলে।
লিঙ্গ আর তলোয়ার উত্থিত রাখাই পৌরুষত্ব। এই মধ্যযামে পৃথিবীর সকলেই হয় যৌনতায়, না হয় যুদ্ধে মাতে।
লুলাও পৃথিবীছাড়া না, যুদ্ধ আর রেপ ভাবতে ভাবতে একমেঘ বৃষ্টি।
বৃষ্টি ফাটিয়ে এগারোটার লোকাল ঢুকল সাড়ে বারোটায় ও ছেড়ে গেল।
প্ল্যাটফর্মে পড়ে রইল মিয়ানো আলো, সুন্দর একটি নীরবতা।
একটি ব্রেন্ডনিউ চাকাওলা সুটকেস।
তার পেছনে একটি নিউব্রেন্ড অচেনা যুবতি। অগ্রে একটি অচেনা যুবক।
হবে হয়তো তস্য স্বামী। আর নিশ্ছিদ্র অন্ধকার।
বৃষ্টির ঝালরে ট্রেন সরে যাচ্ছে পশ্চাতে।
দৌড়ে ঢোকে পর্দা জুড়ে নায়কনায়িকা, শেডে। পদ্মপলাশ ঠোঁট নায়িকার, যেমন হয়।
আলোয় গড়িয়ে নামে মেয়েটির মেকআপ।
যুবকটির হাতের মুঠোয় প্রেম।
হাতে নিভন্ত বিড়ি নিয়ে লুলা।
যুবকটি বলল, এখন অটো পাব, ভাই?
—না।
—মাচিস কাঠি আছে? বড় লাজুক যুবকটি।
এমন ইন্ডিয়া, ট্রেনে একটান বিড়ি খেয়েছি আর মানবসভ্যতা বিধ্বংস!
ধূম্রপান মনা হে।
নো ইসমোকিং।
কারখানার উত্থিত টাওয়ারে ধোওয়া— ইহা
উন্নয়ন ও সভ্যতার উদ্গীরণ। ধূমপান কি একদিনে বর্তমানে পৌঁছেছে? কত ব্রেন লেগেছে সিগারেটে পৌঁছতে! সভ্যতাকে এক চুটকিতে ফুঁকে দেওয়া যায়! কলম্বোর একটা কি সংগঠন।
শালারা জানে না, আদানি উন্নয়ন নম্বর ওয়ান।
মিছিল বার করেছে Adani, animy of the environment প্ল্যাকার্ড উঁচিয়ে!
প্যাকেট বের করে দ্যাখে সব সিগারেটই ভেজা।
হতাশ যুবকটি বড় মলিন।
ভেজা প্যাকেট ছুঁড়ে দিতেই মেয়েটি বড় পরিতৃপ্তির হাসে।
সে নিজের বৈধব্যকে অল্প হলেও রুখতে সাফল্য পেয়েছে।
পরের বউয়ের সব সুন্দর।
মেয়েটির হাসিতে কাচ ভাঙার আওয়াজ।
সঙ্গমে আওয়াজযুক্ত হাসি কামোদ্দীপক কিনা লুলা মোবাইলে সন্ধান পায়নি।
নানাবিধ যৌনক্রীড়া যৌনশিক্ষা যৌনশক্তি-বর্ধক আসন শীঘ্রপতন নিরাময়, সন্ধান করতে হয় না, মোবাইলে এমনিই এমনিই আসে।
তাহাই সে মনোযোগ দিয়ে শোনে ও দ্যাখে।
মেয়েটির ফিগারে সেক্স অ্যাপের আকর্ষণ নাই।
তবুও,
স্রিফ হাত ছোঁয়ালেই মাল আউট হয়ে যায় এমন মাগির পাছা।
মালের বিভায় স্ট্রিটলাইটগুলো পর্যন্ত পিটপিটে।
দিদি তো বলেইছে রেপের মেয়েরা চরিত্রহীন হয়।
মদ্যপ হয়।
মাগিটাও ধরে লে মাতাল ও চরিত্রহীন।
একে রেপ করাই যায়।
—লাও, একটা বিড়িই খাও।
—দাও, তবে সিগারেটের আমেজ কি পাব?
—সময়ে বিড়িকেও সিগারেট মনে করে টানতে হয়।
লুলা বিড়ি ও দেশলাই বাড়ায়।
সিনেমায় ভায়োলেন্সের আগে এমনিই অপ্রাসঙ্গিক ডায়লগ দিয়ে সিন শুরু হয়।
তারপর…
বৃষ্টি থামতেই লুলা ছেলেটির গালে একটি মাঝারি চড় মেরে ট্রলিব্যাগটি নিয়ে গা তোলে।
ওই চাকাওয়ালা বাক্সটি গুড়গুড়িয়ে এনে দিল ঘুমিয়ে জেগে ওঠা বউকে, হাঁই লে! দেখ, ভিতরে কি হিরা জহরৎ আছে!
বড়বাবুর উপদেশ সে ভোলেনি, ধর্ষণে ইনকাম নাই।
মেয়েটির দিকে সে তাকাল না পর্যন্ত, হয়তো রেপ একা একা হয় না এসব গ্যাং-এর কম্ম। গ্যাংরেপ কথাটি বড়ই মধুর। আপাতত
এখন,
পড়ন্ত বিকেলে, লুলা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কলিকাতা ও নিরক্ষরেখা থেকে পাঁচশো কিমি দূরে অনেকক্ষণ ধরে-রাখা মুত ছাড়ছে ছড়ছড় করে।
সঙ্গী চেলা-ও-চামচা লফর।
তাদের পশ্চাতে একটি চলমান মিছিল।
মিছিলে বিস্তারিত তাহারই সাগরিদগণ, যতটা প্রয়োজন তার চেয়েও বেশি মুষ্ঠিবদ্ধ হাত।
তাহাদের কণ্ঠে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির জিন্দাবাদ অথবা বন্দেমাতরম অথবা ভারত মাতাকি জয়ের জগাখিচুড়ি।
মিছিলের শোরগোল ও সাইজটিই প্রদর্শনীযোগ্য, পলিটিক্স বাহ্য।
শ্লোগানে বেঙ্গল হিলে না।
ইশারায় চলন্ত মিছিলকে থামায় লুলা।
লফরাও জিপার খুলে লুলার মুতে মূত্রযোগ ঘটায়।
মূত্রধারাটি নববর্ষায় বেগবান।
ফণা তোলা আঁকাবাঁকা মুত।
লফরা ক্ষিপ্রতার মাটিতে পতিত মলিন ছিন্ন একটি কাগজ টপ করে তুলে নেয়। লফরা রাগ দেখায়। প্রসন্ন তাহার হাসিটি, ভাগ্যে শালা মুতিস নাই!
লুলাকে বোঝা ভার।
কাগজটা টেনে ছিরকুটি করে উড়িয়ে দেয়।
উড়ন্ত মুতের ছিটেফোঁটা তাতে।
—সব শালা গদ্দার।
পুনরায় গদগদ করে মোতে।
এত মুত জমে আছে বুকে! মুতের তোড়ে, থরথর করে ছিন্ন কাগজ, তাতে রাষ্ট্র, তাহাতে রাষ্ট্রের এমব্লেম, তাহার উপর রাষ্ট্রের প্রহরীগণ কম্পিত ও এফোঁড়-ওফোঁড়।
মিছিলে তখন ল্যাজের ছটফটানি।
লুলা তখনও মুতেই, লফরা মুত শেষে ল্যান্ডা লাচায়।
হাতের ইশারায় চলন্ত মিছিলকে থামায় লুলা।
—ইঃ, ক্যালা! রিভোলেশন যেমন পালাই যাছে!
পাঁচফণা সাপের মতো মুতের স্রোত পিচে পাঁচ রাস্তায়, লুলার ঠোঁটে বিড়ির ধোঁয়া, ধোঁয়া-আচ্ছন্ন পরিপ্রেক্ষিতটি ঠিক ঈশ্বর আবির্ভাবের পূর্বমুহূর্ত।
মুতকে মাঝখানে রেখে একটি সম্মানজনক স্পেস।
শালাদের সবাই সব শালাকে ওয়াচে রাখে।
কখন শালারা দিদির অনুপ্রেরণায় মুতে দিয়ে জয় শ্রীরাম বলে ওঠে! সেই জন্য লুলা, তার তত্ত্বে কোনো শালাকে বিসবাস করে না।
—থাক বাঁড়া দাঁড়াই।
গতিকে স্তব্ধ রাখাই পরিবর্তন, উন্নয়ন ও আবির্ভাব এ বিশ্বে। লুলা, মুত-সাঙ্গ লুলা, স্থির মিছিলের পাশে এখন একমাত্র গতিশীল। তারপর মিছিল মোড়ের দিকে এগোয়। লুলা মিছিল থেকে বেরিয়ে বাজার-কালিপাহাড়ির জবরা টেলারকে ধরে, যেখেনে বলব, সেখেনেই বতম টিপবি বাঁড়া!
লুলা ব্যাখ্যা করে, দেখ, থেটনিং লয়, সমঝাচ্ছি।
সেন্ট্রাল পুলিশ না ডিপলিড হলে তোদের ভোটের কুনো নিডই নাই! তোর ভোট আমরাই পোল করে দিথম...
—টিপপি ত সেই একবারই! কষে টিপ ক্যালা!
—ভোটের বতম টিপা ঠিক তোর পছন্দের মাগির দুদ টিপা। টঁ-অঁ-অঁ-অঁ আওয়াজ, যেমন মাগি চিথালে গেল আরামে! তোরও বাড়া দাঁড়াল! যা
খিচবার খিঁচে লে আগুই। সব শালা ত জিতে গেলে অ্যাঁড়টি চুষায়!
ভোটার লুলার নিরপেক্ষ ভূমিকায় কনভিন্সড, ফ্রি চিজ নাই দুনিয়ায়।
লুলা আপাতত নীরব ও নির্বাক, কথা শালা বড় নাজুক।
লুলা কেন, আমাদের সবারই এই দুঃসময়ে ভোকাবোলারি সীমিত, সামান্য-সঞ্চিত ভোকাবোলারিও নাজুক, ভাষার লজ্জাটিকে বর্ম করিতে হয়, সামলে ব্যবহার করিতে না শিখিলে যাহা হয়, ভারভারা রাওয়ের মতো জেলে পচবি!
ধর্ষণের উল্লাস আর রমণের আনন্দ মার্ডার ম্যাসাকারের উল্লাস, কত কি পাওয়া যায় ওই বতম টিপায়।
যে ভোটে জেতে, সে তো পাঁচ বছর অবিরত নির্বাধ নিরন্তর মার্ডারের উল্লাসে, ধর্ষণ সঙ্গমের আনন্দের ভেতর চলে গেল। তুমি শালা তারপর বসে বসে খিঁচো! মাঝখানের স্পেসটি লুলাকে চিন্তায় ফেলেছে।
রাষ্ট্র কিন্তু বলছে, ভোটদান আপনার পবিত্র সাংবিধানিক অধিকার।
—বুদ্দাল্লি? ভোট দিয়া তোর ডেমক্রেটিক রায়ট। তবে যেখেনে বলব সেখেনে দিবি।
সম্প্রতি তাদের ছিনতাই কর্মসূচি বাতিল।
নব নব প্রযুক্তি বহু সাবেকি জীবিকার মৃত্যু ঘটায়।
এখন ইমিটেশনের যুগ, আসল নকল একাকার।
তারপর পেটিএম, ফুটা টিকলিও রাখার দরকার নেই পোকেটে।
এমন দুঃসময়ে কোনো বাদ আর দাঁড়াচ্ছে নাই, সব সময় কী পুংলিঙ্গ খাড়া হয়, স্বয়ং ক্যাটরিনা ক্যাফ কাপড় খুলে শুয়ে পড়লেও ন্যাতা বাঁড়া আর কম্মের থাকে না।
তারজন্য নিরন্তর উত্তেজনা নিরন্তর তত্ত্বের উষ্ণতা লাগে।
ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া প্রয়াসে মতীশ-কমরেড বড় দুঃখ নিয়ে একান্তে লুলাকে ডেকে বলল, তোরা সাপোর্ট ঠুকে দিলে আটতিরিশ নম্বর ওয়ার্ডে আমরাই জিতে যাব।
ইবেরে ভালো সাপোট পাচ্ছি।
ইবেরে…
মতীশকে কিছু বলতে দিলে তো, হাঁ হে কমরেট, সবাই বুঝছে টিএমসি চোরচুয়াড়ের ফালতু দল, বিজেপি দেশটাকেই বিচে দিল, তবু তুমরা ভোট পাচ্ছ নাই কেনে বলবে?
বড়ো পাজল-টানা দৃষ্টিতে তাকিয়ে মতীশ কমরেড, তুই-ই বল?
—আমি জানলে তো এম্লে দাঁড়াথম কমরেট!
—সেটাও সহি। ফ্রেশ পোলিং হলে আমরা ত জিতব।
—বাল জিতবে।
এম্লে ভোটটা ত ওই ফেরেশ না কি বললে, হয় নাই? সেন্ট্রাল পুলিশ বাঁড়া বুথের কাছ ঘেঁষতে দেই নাই টিএমসির হেভিওয়েটকেও।
একটা এম্লেও তো জিতল নাই।
পলিটিক্স কত ইংরাজি পয়দা করে! ইংরাজ-লুলাকে দেখে মতীশ কমরেড হাঁ।
—উদমা কমরেডির দিন ফিনিশ কমরেড! খারাখারি দরদাম করে লাও আগু। রুপয়া যে বেশি ফেকবেক, ধরে লাও, সে-ই জিতছে।
—তারপর ত বাঁশ?
—পোঙায় বাঁশ লিয়েই হামলোক পয়দা হই কমরেট। ই-বাঁশটাও এনজয় করছি।
মতীশ-কমরেড পঁদপঁদ করে পালায়।
—শুন, শুন।
মতীশ-কমরেড থামে, লুলার দিকে তাকানোর কোনো তত্ত্ব নাই।
—আমাকে বতালে বেশ করলে, আর কোনো ঢ্যামনাচোদাকে বলো না তুমাদের জিতবার চান্স আছে।
ক’টা কমরেট আছে নাই? জিন্দাবধ হয়ে যাবেক! কশন দিয়ে রাখলম।
গত বিধানসভা ভোটের সময় দিদি হারছেই, বেঙ্গল জানছে, কংগ্রেস-সিপিএম জোট সরকার নিশ্চিত, গণশক্তির পাতাজোড়া সূর্যকান্ত, নেক্সট সিএম।
টিএমসি লিডার বড় বেদনায় বলে, ভোটে হারলে আমাদের চুদুরবুদুর গেল।
সিপিএম একবার পাওয়ার পেলে আর দু’বারা গলতি করছে নাই, মানে আমাদের পাওয়ার জিরো।
ব্যক্তির পাওয়ার গেলে কী থাকে! যে-ভাবেই হোক, টিএমসিকে জেতাতেই হবে, কীভাবে জেতাতে হবে কর্মসূচি থেকেই মাথায় খেলে চুনাও-ও একটি বাণিজ্যক্ষেত্র, তাতেও কামাই হতে পারে।
—ইলেকশনের আগু আমাদের, ইলেকশনের বাদ তুমাদের।
খারাখারি হিসাব।
এতদিনের ফিরিফোকটের ভোটকে মানিতে টেন্সপার করতে লুলাদের বহোত, জনে জনে, গ্রুপে গ্রুপে বহোত দিবস-রজনী বহোত ভাষা-উপভাষা বহোত ইশারা-ইঙ্গিত মাসল্-পাওয়ার, বহোত সম্ভাবনাকে রাঙাতে হয়েছে।
ফক্স হোলে, ওপেনে, আন্ডারগ্রাউন্ডে, সারফেসে।
কোনো চুক্তিই বাঁড়া ই যুগে টিকে না, ত, পোতিশ্রুতি! প্রতিশ্রুতির ফ্লাড বইয়ে দাও!
বিজেপির লিডারকে সাফাসাফি বলে, পাঁচ পাত্তি পার ভোট।
মঞ্জুর?
বিজেপির লিডার বড় হতমান, পধান মন্তিরির বিকাশ তব বেঙ্গলে হোনে নেহি দেঙ্গে?
লুলাও বিজনেস ম্যান, উদমা ফিরিফোকটের বিকাশ ভুলে যাও।
ফরগেট!
তুমাদের ত মানির অভাব নাই। অ্যাডভান্স বুকিং।
একজন এম্লে এমপি এক টিকিটে জিতে যদি নিজেকে বিচে দিতে পারে অন্য দলের টাকায়, তবে আমার ভোটের কি মুরাদ! ভোট কিনে লাও, তারপর তুমি ল্যাজে কাট, ঘাড়ে কাট, যাকে খুশি বিচ, নাফা-লস তুমার কারবার।
যা খুশি তাই কর, তখন তুমার হক।
জনতার কুচ্ছু বলার নাই।
লুলার তত্ত্ব।
—ভোট আভি কিনে নিতেই হবে।
সে কিস্তিতে কেনো, নগদানগদি কেনো।
ইডিওলজি বিলিয়ে চুনাও জেতার শতক এটা নয়।
যার ট্যাঁকের জোর বেশি, ইন্ডিয়া তার।
ডোন্ট ফরগেট, মোদিও বিজনিসম্যান।
চা দিয়ে বিগিনিং।
লুলা জানে না, রাষ্ট্রসংঘের মতে উন্নয়ন মানে মানুষের পছন্দের সম্প্রসারণ।
লুলা জানে না, যত কম লোক কৃষিকাজ করে সে দেশ তত উন্নত।
লুলা জানে না, পার্থেনিয়াম ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশের মাটিতে।
লুলা জানে না, কাঁটাগাছ জন্মানোর মানেই হল মাটির ভগ্নস্বাস্থ্য।
লুলা জানে না, পৃথিবীতে মাঝে মাঝে এরকম শীত অসাড়তা নেমে আসে।
লুলা জানে না, লুলাদের উত্থানের ইতিবৃত্ত।
লুলা জানে না, লুলাদের পতনের লুকাছুপি কহানি।
লুলা জানে না, তাদের বিনষ্ট করার জন্য যারা বিনিদ্র, তাদের রুখবার জন্য তাদেরই বিনিদ্র থাকতে হবে।
লুলা জানে না, রাষ্ট্র ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের দরকার নেই রাষ্ট্রের।
লুলা জানে না, কত বিল পাশ হয়ে গেল বিনা সংসদেই!
লুলা জানে না, কোরেনটিন সুসভ্য-বন্দিত্ব পুঁজিবাদের মহান আবিষ্কার।
লুলা জানে না, রাম কিংবা নবিকে অপমান কিংবা সম্মান মানে ভোটের গাণিতিক অদলবদল।
লুলা জানে না, আদানি-আম্বানির উত্থান মতলব ইন্ডিয়ার উত্থান।
এত এত না-জানা লুলা ও লুলার তাহারা; খিদে না, কর্ম না, শোষণ না, বঞ্চনা না, ডাক্তারহীন চিকিৎসা, কৃষকহীন কৃষি, বাজারহীন শপিং, স্পর্শহীন মুদ্রা, চালকহীন গাড়ি, মাগিহীন যৌনতা, মস্তিষ্কহীন শরীরের ভেতর জীবনযাপন করছে…
এমত বিচ্ছিরি সময়ে, মতীশ-কমরেট লুলাকে একান্তে বলে, আমাদের কথাটা ভাবলি নাই? দেশের স্বার্থে, সমাজতন্ত্রের স্বার্থে, শোষণ বঞ্চনার স্বার্থে, আমাদের কথাটা ভাব।
—ফেসবুকে দেখলাম তুমাদের বুড়া কমরেটগুলা ভাবতে ভাবতে ঘুমাচ্ছে! সম্মেলন না কি একটা সার্কেস তুমরা হর সাল করো না, সেখেন। হেয়ার কন্ডিশন ছিল বোধহয় হলটা? বুড়াগরু দিয়ে বোহালে চাষ হয়!
—কেনে একপাল নতুন বিটিছিলা, ইয়াং জেনারেশন, দেখছিস নাই, জেল যাচ্ছে, আন্দোলন করছে…
—তুমাদের কাচড়া সাফ করতেই জুয়ানিগুলা ওল্ড হয়ে যাবেক কমরেট! ছাড়, ছাড় উসব।
একটা মিছিল করো দেখি কমরেট, আমি লোক দুব। শস্তা দরেই দুব। পাইকারি দরেই দিয়ে দুব।
টাটকা গোটা মিছিল।
ধরো হাজার পাঁচেক দিবে।
ফুট হিসাবে তুমাদের দিবার হিম্মতে নাই।
—ফুট?
—ফুট হিসাবে মিছিল করি এখন, অ্যাডভান্স দিয়ে যাও।
—অ্যাডভান্স, মানে রুপিয়া?
—হঁ।
ডেট বলবে, খাতা খুলে দেখতে হবেক ডেট ফাঁকা আছে কিনা, দিতে পারব কিনা।
বিস্ফারিত চক্ষুর তলায় লুলা মতীশ-কমরেডকে জানাতে চায়, দিবস-রজনী দিবস-রজনীর নিয়মে চলে না, রাজনীতি নিজের সুবিধা মতো দিবস ও রজনী সাজায় কমরেট।
—তুমরা কি সাজাতে নাই? পাওয়ারে
থাকা সব পাটিই সাজায়। বুদত্তালে কমরেট, বিজেপি আধ মাইলের মিছিল বুক করেছে। টিএমসি বলেছে, আমাদের দু-ফুট হলেও বড় মিছিল চাই। যতই হোক রুলিং পার্টি! পেসটিজ ম্যাটার।
মতীশ থতমত।
লুলা একটি হাসি প্রেজেন্ট করে।
বাংলায় যাকে বলে, পরিতৃপ্তির, আমরা পেটি কন্টাকটার। রেট বাঁধা। ভোট পিছু পাঁচ পাত্তি। ফুট পিছু মিছিল দু’ পাত্তি। এক লাইনের মিছিলের রেট অলগ। দু’ লাইনের রেট ডিফারেন। গ্যাদারিং-মিছিল নেগোসিয়েট ম্যাটার। রেট পাইভেটে সেটেল হয়। সাইলেন মিছিলের রেট ভিনু। সকালের মিছিল, রেট অলগ। বিকালের জুলুস, আলাদা কিমত। চিল্লামিল্লির জুলুস কিমতি। বহোত লেবার দিতে হয় মিছিলে। টুঁটি ফ্যাড়ে চিল্লানো, কম পরিশ্রম? তার উপর হাঁটাহাঁটি! আমাদের সিরিফ লোক সাপলাই দিয়া দায়িত্ব।
ডেকোরেশন তুমাদের। ঝান্ডা
তুমাদের। ফেস্টুন
না কি বলো, তুমাদের। তুমাদের লিডার। আমরা কেবল হাঁকাব জিন্দাবাদ, মা-মাটি-মানুষ, জয় শ্রীরাম... যা বলবে… ইয়ার বাইরে নতুন শোলোগান কিছু যদি বলতে হয়, রেট ডিফারেন। রিস্কি সোলোগানের ইনসিওরিন্স খরচ পাটির। আগুতেই নতুন শোলোগান সাবমিট করতে হয়। বিফোর সাত ডে। নিউ শোলোগান জিভে সেট করতে টেইম লাগে। ফুল পেমেট না দিলে জুলুস রোডে নামবে নাই।
লুলা একটু থামে, হুঁ, লাস্টের দিনটা পাবে নাই।
বিজেপি সকালে, টিএমসি বিকালে, বুক করেছে।
মিড ডে-তে পাবে।
তাতে ফায়দা, বাল! কে দেখছে তখন তুমার জুলুস? মানুষ তখন ঘুমায়। মানুষ সবসময়ই ঘুমায়।
তাদের ঘুম পাড়াতে যে পারল, তার পাওয়ার সিকিউর।
ডেফিনিট। ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি মেসোপিসার ইন্ডিয়াতে নিদ টুটাবার সোনার কাঠি হাতে আভি নোবডি, কেউ নাই কমরেট! বৃষ্টির জলের মতন আন্দোলন, ট্রেন বাস পুড়ানো, মানছি না মানব না-গুলো দুনিয়া ভাসিয়ে কাঁহা কাঁহা হারিয়ে যাচ্ছে! মাইরি আল দিয়ে জলটাকে প্রপার কাজে লাগাতে কুনো রিভোলিশনারি পার্টি নাই ইন্ডিয়ায়? অত অত ফোর্স খুচরা বালের মতন উড়ে যাচ্ছে!
মতীশ-কমরেডের হাঁ মুখ বড় হচ্ছে হাঁ হাঁ-কারে, নীতিফিতির বালাই রইল নাই!
বিষণ্ণ মতীশ-কমরেড।
—ইন্ডিয়ায় ইটাই এখন চালু বিজনেস কমরেট। মিটিং-এ লোক সাপ্লাই। মিছিলে জঙ্গি আদমি সাপ্লাই। বুথ দখলের জং। জেনুইন ভোটার সাপ্লাই। সব পাবে। একদিন আফিস আসো, রেটচাট দিয়ে দুব। সিন্ডিকেট বুঝ ত? লাপরবাহা আমাদের জন্য ত ইন্ডিয়া কিছু রাখে নাই। তুমরা ক্যালা পুরানা ডিজাইনেই রইলে কমরেট! তুমাদের বহোত দোষ ছিল, তাও ভক্তি আসত! মাইরি! ই শালারা লিডার! বাল! কিন্তু
কী করব, যে ভাত দেই সেই ভাতার। সে মিছিল আর কই! সেই জোশ! উডা দো গুঁড়া দো! মানছি না, মানব না! তুমরা এখন ভিজা বারুদ! উড়িয়ে দাও গুঁড়িয়ে দাও মার্কা জুলুস করো, ফিরি আদমি দুব! একটা ফুটা টিকলিও লুব নাই! মাইরি বলছি! আমরাও চাই একটা রিভোলেশন হোক। জোস থাকলে সব হয় কমরেট।
তবুও মতীশ-কমরেডের ভুরু আর সোজা হয় না!
—যদি না জিতো, খুব কি গরিবের লুকসান হবেক, হাঁ কমরেট?
—হবেক নাই, বলছিস? গরিবলোকগুলা বড়লোক হয়ে গেল বলছিস দিদির শাসনে?
—গরিব মানুষ কষ্ট কি ম্যাটার জানেই না! গরিব
লোকদের গরিব করে রাখাই ত পাটিপলিটি। রেশনে ফিরি চাল-গম-আটা, ব্যাঙ্কে
লখখিছিরি,
ইস্কুলে সাইকেল। বলছে নাকি, মোবাইল দিবেক! ফটফটি দিবেক! ল্যাপটপ দিবেক! কিন্তুক
মাইরি!
লুলা ফুক্ করে হাসে, তুমি লক্ষ্য করেছ কমরেট, বিপিএলের লোক ইনকিরিজ করছে বেঙ্গলে? এত গরিব-প্রেম কম্পিটিশন আজাদ ইন্ডিয়ায় কভি হয়েছিল!
লুলা তত্ত্বের ইতিহাস খুঁজে পাচ্ছে না।
মার্কস সাহেবের তত্ত্ব ছিল, শ্রেণিহীন সমাজ গড়ার, স্মিথ সাহেবও বললেন,
No society can surely be flourishing and happy, of which the far greater part
of the members are poor and miserable.
মার্কস সাহেব দাওয়াই ছিল, শ্রেণিসংগ্রাম, স্মিথ সাহেবের দাওয়াই ছিল,
Civil government, so far as it is instituted for the security of property, is
in reality instituted for the defense of the rich against the poor, or of those
who have some property against those who have none at all.
লুলা মার্কস সাহেবের পক্ষে থেকে দেখেছে কমরেটরা স্মিথ সাহেবেরই বেশি ভক্ত। এতসব আগুন ও একোয়া, খরা ও মনসুন!
লুলার সাইক্লোন হতে মন চায়, সব ভেঙেভুঙে একটি শুদ্ধ ভাঙন, একটি দুর্বিসহ শক্তি।
কিন্তু সাইক্লোনের শর্তাবলী তার না-আয়ত্তাধীন, প্রকৃতিকে রাজনীতি করে তুলতে পারার মতো তত্ত্বও তাহার অধিকৃত নয়।
সে জানেই না ক্রান্তীয় সাইক্লোনের আকৃতি চক্রাকার।
তার ব্যাস ৩২০ কিমি থেকে ৮০০ কিমি।
ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে আবর্তিত হয়।
এরজন্য ছ'টি অনুকূল পরিস্থিতি প্রয়োজন।
যথা, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত জলের উষ্ণতা হবে ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, নিম্নচাপরেখা মজুত থাকবে উষ্ণ জলের কাছাকাছি, উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডল দ্রুত ঠান্ডা হবে, বজ্রগর্ভ মেঘ জমবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৬০০ ফুট উপরে বায়ুমণ্ডলের মাঝামাঝি জায়গায় এবং সর্বোপরি ঘটনাটি ঘটতে হবে নিরক্ষরেখা থেকে ৫০০ কিমি দূরে।
ঘূর্ণিঝড় যখন ল্যান্ডফল করবে, পূর্বাভাসবিহীন সেই ল্যান্ডফল, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রান্ত ভূভাগে একশোটি হাইড্রোজেন বোমার সমকক্ষ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে যাবে।
এরকম পূর্বাভাসবিহীন, প্রস্তুতিবিহীন তোড়ফাড় সাইক্লোন পশ্চিমবঙ্গে ১৯৭৭ আর ২০১১ সালে, ইতিহাস বলে, হয়েছিল।
ইন্দোনেশিয়া তার রাজধানী সরিয়ে নিচ্ছে জাকার্তা থেকে। লুলার কিচ্ছু এসে যায় না।
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলো, সবাই, অস্ট্রেলিয়াকে দায়ী করছে আতঙ্কিত আগামী দুর্দশার জন্য। লুলার বাল! জলস্তর
বাড়লে বহু রাষ্ট্র নাকি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। যাকগে, লুলার খুশি বাগ মানে না! ইন্দোনেশিয়া, গ্রেট বেরিয়ার রিফের কাছে আদানিকে বরাত দিয়েছে কয়লা তুলতে। দেওমি-পাচমায় আদানিকে বরাত দিয়ে দিদি সঠিক কোম্পানি নির্বাচন করেছেন।
এ বছর ২০২২ জুলাই মাস থেকে আদানি বিনা শুল্কে কয়লা আমদানি করবে।
কোল ইন্ডিয়া বসে বসে বাল ছিঁড়ে আঁটি বাঁধবে।
ইন্ডিয়ার বিকাশে লুলার আনন্দ বাগ মানে না।
অরণ্য না-ধ্বংস করার প্রস্তাবে একমাত্র সক্রিয় বিরোধী রাষ্ট্র হল ইন্দোনেশিয়াই। লুলার
ছেঁড়া যায়। গুরুত্বহীন এইসব ছোট ছোট ঘটনাগুলো এভাবেই কীভাবে যেন বিশ্বঘটনা।
তদ্রূপ লুলাও, সে-ও তবে বিশ্বঘটনা।
সে জানে নদীর জল কোন্ জাদুতে হয়ে যায় জলসম্পদ।
প্রতি ছাব্বিশ ঘণ্টায় একজন করে নতুন শিল্পপতির জন্ম হচ্ছে।
দশ ধনকুবেরের প্রতি সেকেন্ডে মুনাফা পনেরো হাজার ডলার।
পৃথিবীতে প্রাচীন অপ্রয়োজনীয় শ্রেণিটির সঙ্গে যুক্ত হল ষোলো কোটি হাভাতে মাদারিচোদ।
পৃথিবীর ভূভার সে শালারাই বাড়ায়।
একটি দেশের লজ্জা ও সমস্যা হল এই সমস্ত হাভাতে শালারা।
এই শালাদের বিলুপ্তি মানে সুজলাং সুফলাং এক-একটি উন্নত জিডিপি, এক-একটি সমৃদ্ধ দেশ।
মুকেশ আম্বানির প্রতি ঘণ্টায় ইনকাম ৯০ কোটি।
১০.৮ লক্ষ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ মকুব করেছে সরকার।
No comments:
Post a Comment