বাক্‌ ১৫৩ ।। সিদ্ধার্থ মিত্র


 

দেব শিশু


জং ধরা গেটের মতো ঝুলে পেশীর খাঁচা
পোষাকের তলায় লুকানো বেশ্যার শরীর
খুলে দেখিয়েছে, তার পা বেয়ে নেমে যাওয়া
অসংখ্য জেব্রা ক্রসিং, গলন্ত পিচের তাল ও খানাখন্দ

বুক চিরে বেরিয়ে আসা এক দীর্ঘস্থায়ী রাস্তা
যা বারে বারে নেমেছে আঁধারে
সমবেত হয়ে গাজন নেচেছে পশুর দল

সিঁথির ঘাম মেশানো সংকটের মিলনসাগরে
পূর্ণ্যসাধ অরণ্যে সারি সারি
গাছ, তরুলতা
ডেকেছে হরিণের চোখ ও নাভি, চুপিসারে
খাট থেকে নেমে গেছে সভ্যতা, সবুজের মাঝে

পায়ের মাঝে দাঁড়িয়ে আমি, অজানা জ্বরে কাবু
ক্রমাগত নাড়িয়ে চলেছি সাদা পতাকা, হাতে বিরতির বাঁশি
নীচ দিয়ে বইছে গোমুখের শীতল গঙ্গা

আজ থেকে
সব বেশ্যাই আমার মা, কালী ও দূর্গা
আমি তার একমাত্র বৈধ সন্তান


 

 

শিকার


গতরাতে
একটা ডোরাকাটা চাদর গায়ে শুয়েছি
ঘুমের ভিতর, বাঘ পড়েছিল শরীরে
পা হড়কে, পিচ্ছিল কাদায় মাখামাখি
তবু, অব্যর্থ নিশানার থাবায় আটকে শিকার
চেটে খেয়েছি গরম রক্ত, উঠেছে ঢেকুর

শিকার শেষে
জলে নেমে নিজের প্রতিবিম্বে দেখলাম
একটা তৃপ্ত ঘোড়ার মুখ, আদলটা ঠিক মেঘের মতন
সাঁতারের জলে বিছানা ভিজলো

তারপর বালিশ ছেড়ে বেরিয়ে
বিচ্ছিন্ন তারার মতো বিছানায় ঝুলে রইলাম, শুক্রস্থানে

ঘুম থেকে উঠে দেখি
গায়ে লেপটে একটা আঁশটে গন্ধ
পেশীর ভাঁজে আটকে কয়েকটা হলুদ লোম
ঠোঁটের কোণে কয়েক ফোঁটা রক্তের দাগ


 

 

হংসধ্বনি


হাত খুলে দেখালে ডানার গুচ্ছ পালক
আর পা দুটো লকলকে সাপ
যোনিস্তম্ভে রোদ্দুর ভয়ানক
স্তনগুলো ঐরাবতের শুঁড়

আমার রক্তে খুরের শব্দ শুনতে পাচ্ছি
এখুনি শুরু হবে লম্বা ঘোড়দৌড়
ক্ষুধা থেকে হাতিয়ার সাজিয়ে রেখেছি
চোখের চিৎকারে, নিঃশব্দ হত্যার সংকেত
ইহজীবন ও পরজীবন, ধ্যে কয়েক হাজার বছর

পাথরের ভিতর শায়িত আমার প্রাণ আজ নিখোঁজ
সমুদ্রতলে, নীলপেঁচা বা শেয়ালের গর্ভে ঘুমিয়ে

শরীরের আঁচড় থেকে
পায়ের পাতায় ঝুলছে সোহাগ, সময়ের কারুকাজ
গ্রীবায় গ্রীবায় সান্ধ্যকালীন মূর্ছনা, দুর্ভেদ্য হংসধ্বনি

মাটির বুকে কান পেতে শুনি জলের প্রবল বিস্ফোরণ


 

 

সোয়েটার


ভালোবাসা একটা ঐচ্ছিক হিড়িক
জানলার এপারে চেনা গারদের দাগ
ওপারে দুর্বোধ্য কারাগার, যন্ত্রণাসমগ্র
জলহীন সঙ্কটে সন্ত্রাসের উদ্বেল নেশা
ভেঙে আদিম সময়ে আবির্ভাব
এক নিষ্কলঙ্ক জ্যোতির্ময় ধ্বনি

মিলনের সুখ মাখা গায়ে
একগুচ্ছ পায়ের ছাপ, ধীমান স্বর
পাখির ভাষা, নীরব ধ্বনি ও হরবোলা কীর্তন
গীত, রামায়ণী পর্ব সেরে অহল্যার শাপমুক্তি

চঞ্চল পাখির উতলা ডানায়, দ্রুত তাল
লয় ভেঙে বিছানায় বৃক্ষরোপণের জল
এক মুঠো সঙ্গমের মাটি গায়ে মেখে
অন্তিম সংস্কার, চিতার বাদ্যে রসাতল

বর্তুল রক্তে বাঁধা অধোগমন রূপের চড়াই
পেরিয়ে, হাঁসের সন্তর্পণ গতির স্থিমিত পথ ভেঙে
গায়ে খুঁটে দেয় আগুনরঙা ফুল

ভালবাসার উলকাঁটায় বোনা সোয়েটারের ভেতর
এখন কোনো শীত নেই, গ্রীষ্ম নেই, বসন্ত নেই
পড়ে আছে কিছু খুলে পড়া অবৈধ সূত্র




মিথুন


গ্রীষ্মের পেশি কাঁপে দাপটের আশায়
তোমার গরম চোখ এখন ক্রুশের কাঁটায়
বুনছে, আগুনের নকশা ও দপদপ শিখা

ভেতর ভেতর কুঠুরি গুলো
ছাইয়ের প্রলেপে ঢেকে থাকা ধুলো
আর যোনির অন্ধকারের আর্তনাদ, বৃথা

অতল মোমের নিরবধি আলো মুছে
একাকী সন্ধ্যের প্রচ্ছদ ভিজছে শীৎকারে
শিস-ফুঁ দিচ্ছে শীত প্রকল্পের কোহরে

মস্তিষ্ক পাঠাচ্ছে কসমিক তরঙ্গ, মাংসজ ঘ্রাণ
সাপের জিভের মতো দুই পা চিরে দাঁড়িয়ে উজান
অন্ধকারে প্রচণ্ড কাঁপুনী থরথর করে বাদল ঘর

পথ খুঁজছে বিগ্রহের তিলক, ঘামের ফসিল
তোমার চাদরের ভিতর শুয়ে আমার নগ্ন রাশিফল


লেখে-

অনিবার্য কারণবশত আমার ভবিষ্যৎ চক্রে
নেমেছে পাহাড়ের ঢাল, গা বেয়ে আকাঙ্খার জাফরি
 

তার ফাঁক দিয়ে আলোর রোশনাই  তরল স্রোত 

ঢাকছে খিদের কোরক


এখন আলতাময় পায়ে জড়ো মিথুন কুয়াশা

 

No comments:

Post a Comment